Tuesday, January 28, 2020

ব্লগে প্রত্যাবর্তন! স্বাগতম ২০২০!

এই বছরের শুরুতে কার্টুনিস্ট আসিফের ব্লগ পড়ে ইন্সপায়ার্ড হয়ে ঠিক করলাম প্রায় মৃত ব্লগটাকে জীবিত করব, প্রতিদিন না হলেও প্রতি সপ্তাহে একটা আপডেট থাকলে নিজের কাজের একটা লগ মেইন্টেইন করা যায়। যেমন গত কয়েক বছরে কী কী কাজ করেছি তা আমার কোত্থাও গুছিয়ে রাখা হয়নি, এখন চট করে মনেও পড়বেনা।

আজকে মাসের ২৮ তারিখ, বোঝাই যাচ্ছে আমার ডিটারমিনেশনের দুরবস্থা! তবে গতকাল যেহেতু আমার জন্মদিন ছিল, উপলক্ষ্য (কিংবা অজুহাত) হিসেবে এটাকে দাঁড় করানো যেতেই পারে। এও আরেক 'নতুন বছর'!

নতুন বছরের রেজুলেশন নেবার আগে আগের বছরকে একটু রিভিউ করা যাক!

২০১৯ এর বইমেলায় প্রকাশিত
 'সায়েন্স মিক্স-কমিক্স'
গত অনেকদিন ধরেই এটুআই এর কিশোরদের জন্য করা 'এডুটেইনমেন্ট' প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়নে  নিয়মিত কমিক্স পাবলিশ করছি প্রজেক্ট টিকটালিক থেকে। ২০১৯ এর বইমেলায় ৬টি বিজ্ঞান কমিক্সের একটা সংকলন বের করা হল 'সায়েন্স মিক্স-কমিক্স' নামে, যার বেশির ভাগই আগে কিশোর বাতায়ন বা অন্য কোথাও প্রকাশিত। এছাড়া বেশ কয়েকটি সায়েন্স আউট্রিচ প্রোগ্রাম ছিল এই বছর। মার্চে ইএমকে সেন্টারে আয়োজিত হল তিনদিন ব্যাপি সায়েন্স ক্যাম্প, যার প্রধান আলোচক ছিলেন ড মুহাম্মদ ইব্রাহীম স্যার, ছোটবেলা থেকে যার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছি। এই প্রোগ্রামের সাথে ছিল উন্মাদ, আমার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মেন্টর কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের নেতৃত্বে, আর ছিল ছোট পরিসরে একটি সায়েন্স কার্টুন এক্সিবিশন। আগস্টে একটি ওয়ার্কশপ আমরা করেছি SPaRC এর সাথে কোলাবরেশনে রাঙ্গামাটি মোনঘর স্কুলে, কয়েকটি কারণে এই স্কুলটির কথা আলাদা করে বলতে হচ্ছে। প্রথমত- প্রায় অর্ধশতক আগে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাতে শুরু হওয়া এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আদিবাসী, এই প্রথম আমাদের বিজ্ঞান কমিক্স আদিবাসী শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছুলো। দ্বিতীয়ত, এখানের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত, পাঠ্যপুস্তকের বাইরের শিক্ষা নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে তার বড় অংশই এই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছেনা।


ট্রিবিউট টু ম্যাড- শিরোনামে দৃক গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত
 কার্টুন এক্সিবিশনের জন্য করা করা কাজ। বিশ্বখ্যাত
'ম্যাড' ম্যাগাজিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সালের
আগস্টে এই আয়োজন করে উন্মাদ পত্রিকা
গত বছর ছিল আমার পেশাগত জীবনের বিশা-আ-আ-ল শিফট! ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে আমি অফিশিয়ালি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। (এরকম ঘি-মাখন চাকরি কেন ছাড়লাম তা নিয়ে অজস্র প্রশ্নের ও ক্ষেত্রবিশেষে হাইপোথিসিসের সামনে পড়েছি, সেটা নিয়ে আলাদা লেখা লিখব একটা কখনো!) মনে মনে স্থির প্রতিজ্ঞা, পরবর্তী এক বছর প্রজেক্ট টিকটালিকে পুরোপুরি সময় দেব, অন্তত বড় কোন প্রজেক্ট হাতে নেব না আপাতত! তবে মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক! প্ল্যান ছিল ২০১৯ হবে যাকে বলে 'Year of TIKTAALIK'! জানুয়ারি মাসেই একটা প্রজেক্ট হাতে চলে এল- নিজের কাছেই যেটাকে মনে হল যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ, এমন যে সেটার জন্য নিজের কয়েক মাস ব্যয় করাই যায়! প্রজেক্টটা এক কথায় বললে রোহিঙ্গ্যা বাচ্চাদের পাঠ্যবই। কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে এই মুহূর্তে অফিশিয়াল হিসেবে আছে প্রায় ৫ লাখ শিশু, যাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা অন্যতম প্রায়োরিটি এখন। ইউনিসেফের উদ্যোগে তাদের জন্য একটা কারিকুলাম করা হয়েছে, যার একটি বিষয় হল ইংরেজি। লেভেল ওয়ান থেকে ফোর- মোট চারটি লেভেলের বাচ্চাদের জন্য ইংরেজি বিষয়ের পাঠ্যবই (মোট ষোলোটি মডিউল), শিক্ষক সহায়িকা, এবং ক্লাসে ব্যবহারের জন্য পোস্টার, ফ্ল্যাশকার্ড ইত্যাদি পুরো প্যাকেজ প্রণয়নের দায়িত্ব নিয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এই পুরো প্যাকেজের সমস্ত ইলাস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলাম আমরা। প্রথমে রাফ হিসেব করে দেখা গেল হাজার খানেক ড্রইং সব মিলে, সময় মেরে কেটে নয় থেকে দশ মাস, বড় টিম নিয়ে কাজ করলে ম্যানেজেবল! ছয়মাস পর সেই সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশিতে গিয়ে ঠেকল। সাথে যোগ হল আক্ষরিক অর্থে হাজার হাজার পৃষ্ঠার ডিজাইন! কপাল খুবই ভাল থাকায় শুরু থেকেই টিমে পাওয়া গেল মহাব্যস্ত দশভূজা কার্টুনিস্ট মেহেদী হককে, অবিশ্বাস্য গতিতে কাজ করে এই লোক। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে প্রিয় ইলাস্ট্রেটর আসিফ রাজি হল এই টিমে কাজ করতে। আর্টিস্টদের মধ্যে পরে আরো যোগ হল রোমেল বড়ুয়া, হাসিব কামাল, সব্যসাচী চাকমা। প্রত্যেকেই দুর্দান্ত কাজ করেছে, তারচেয়ে বড় কথা, টাইট ডেডলাইন থাকার পরেও একজনও সহসা কোন ডেডলাইন মিস করেনি। প্রজেক্টের বিভিন্ন পর্যায়ে ডিজাইনের কাজ করেছে ডিজাইনার মাহবুব ভাই, বাবুল ভাই, আলভী (সদ্য চারুকলায় ভর্তি হয়েছে, সামনে ওকে আরো পাওয়া যাবে আশা রাখি!) এবং রোমেল। ব্রিটিশ কাউন্সিল ক্লায়েন্ট হিসেবে খুবই সেন্সিবল- কাজেই কাজের প্রেশার ছাড়া আর কোন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি!

সুবিশাল এই প্রজেক্ট যখন শেষ হল, বড় একটা দম নিয়ে দেখি- ২০১৯ শেষ!!!

২০২০ সালের খবরগুলো দেয়া যাক আপাতত- প্রজেক্ট টিকটালিকের দুইটা নতুন সায়েন্স কমিক্স বেরুচ্ছে এই বছর বইমেলায়। একটির লেখক ও আঁকিয়ে শাহাদ সাইফ খন্দকার, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলোজির ছাত্র, বেশ কিছুদিন হল উন্মাদ ম্যাগাজিনে আঁকছে। আরেকটা কমিক্স করব আমি নিজে, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। বাকি ডিটেইল যথাস্থানে জানানো হবে। 

বইমেলায় নিজের কমিক্স ছাড়া বইয়ের ইলাস্ট্রেশন আমি খুবই কম করি, তবে এবার দারুণ একটা বই আঁকার সুযোগ হয়েছে, নাম 'মিতু তিতুর সাবমেরিন', প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা। গতবছর বের হওয়া 'মিতু তিতুর টাইম মেশিন' বইটার সিকুয়েল বলা যেতে পারে এই বইটিকে। মিতু তিতু নামের দুই ভাইবোনের নানা এডভেঞ্চার নিয়ে বই। গতবার তারা টাইম মেশিনে চড়ে চলে গিয়েছিল ডায়নোসরের যুগে, এবারের বইয়ে তাদের এডভেঞ্চার সাগরের নিচে। 

'মিতু তিতুর টাইম মেশিন' বইয়ের একটা ইলাস্ট্রেশন
আঁকাআঁকির বাইরে অন্যান্য কাজে জড়িয়ে গেছি এ বছরেও, বিস্তারিত পরে লিখব, তবে সেসব নিয়েও অনেকখানি এক্সাইটেড এখন। আশা করি বছর ভালই যাবে। 

জন্মদিনের রেজুলেশন? না-ই বা লিখলাম!

No comments:

Post a Comment