“You want to know so much about his death, but what do you know about his life?”
~ Loving Vincent
আম্মু চলে যাবার আজকে ২২তম দিন। জীবনের কঠিনতম তিনটি সপ্তাহ আইসিইউর সামনে কাটানোর পর গত এই কটি দিন কীভাবে গিয়েছে আমরা কেউই জানিনা। হাসপাতালের পুরো সময় শুভাকাঙ্খিরা সমবেদনা জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়েছেন। আত্মীয়-অনাত্মীয়রা অপ্রত্যাশিত ভালবাসা যেমন দেখিয়েছেন, পাশেও দাঁড়িয়েছেন সকল প্রয়োজনে।
তারপর এক বিষণ্ণ ভোরে আমাদের সব প্রয়োজন ফুরালো, আমাদের আটকে থাকা নিঃশ্বাসটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঠিকানা হারালো। এমন ঘটনায় কাছের-দূরের সকলে দুঃখিত হয়, সমব্যাথী হতে চায়। জানতে চায়- কী হয়েছিল? কীভাবে এমন হলো? আর কি কিছু করার ছিল না?... সংক্ষেপে উত্তর দিই। কিন্তু উত্তরের পিঠে চেপে আসে আরো বহু প্রশ্ন- সার্জারি, ভেন্টিলেশন, আইসিইউ... পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম শব্দগুলো সুঁচের মত গেঁথে গেঁথে বসে বুকে পিঠে। দ্রুত কথা সেরে প্রসঙ্গ পাল্টাই। পরদিন আবার, অন্য কেউ, অন্য কোথাও, একরাশ দুঃখ নিয়ে জানতে চায়- কী করে হলো?...
হঠাৎ আবিষ্কার করি, মানুষ আসলে জীবনের চেয়ে মৃত্যু নিয়ে বেশি কৌতূহলী। অথচ মৃত্যু কি আশ্চর্য নির্বিকার একটা ঘটনা, যেখানে এসে সব মানুষ মিলে মিশে এক হয়ে যায়। ঠিক যেমন কবরস্থানের সারি বেঁধে শুয়ে থাকা মানুষগুলোকে দেখতে হুবহু একই মনে হয়। মৃত্যুর আয়োজনটাও তো একইরকম নির্বিকার- যেকারণে আইসিইউতে সারি সারি বেডে শুয়ে থাকা মানুষগুলোকে হঠাৎ করে দেখলে আশ্চর্যজনকভাবে একইরকম দেখায়! অথচ এই নৈব্যক্তিক বিষয়াদি দিয়েই আমরা জানতে চাই, চিনতে চাই, সংজ্ঞায়িত করতে চাই মানুষকে। এ কী ভীষণ অন্যায়!
প্রতিটি মানুষ যদি অনেকগুলো গল্পের সমষ্টি হয়, তবে সেই গল্পগুলোই তো তার সত্ত্বা, তাকে চেনার, জানার, ছুঁয়ে দেখার উপায়। আম্মুর গল্পগুলো তাই আমি খুব করে বলতে চাই। মনে না থাকা শৈশবে, যেই স্মৃতি বা বিস্মৃতিতে শিউলী ফুলের ঘ্রাণকে কিছুতেই আমি আম্মুর শাড়ির ঘ্রাণ থেকে আলাদা করতে পারিনা; সেই ভুলে যাবার কালে- যেসময়ের টুকরো স্মৃতিতে হঠাৎ হঠাৎ আম্মুর হাসির পাশে উঁকি দেয় বারান্দায় ফোটা সূর্যমুখী ফুল; সেই সময়ের ঘ্রাণ আমি টুকে রাখতে চাই। এই গল্পগুলো বলার আয়োজন হয়ত বড় বেশি ব্যক্তিগত, তাতে কী?
এই যাহ, বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম।
শুভ জন্মদিন আম্মু!
নভেম্বর ২২, ২০২২