কৈশোর পেরোবার পরপর কোন এক শান্ত সন্ধ্যায় গোলাপী আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ খুঁজে পেয়েছিলাম- তা হল আনন্দ! স্ফুলিঙ্গের মত অর্থহীন কিন্তু প্রাণময় উজ্জ্বল একটা আগুনের কণার মত বেঁচে থাকে একেকটা মানুষ। সর্বাংশে না হোক, বেঁচে থাকার এই ছোট্ট সময়টা অন্তত কিছুটা আনন্দে না থাকলে যেন সেই জীবনটার প্রতি অর্ঘ্য নিবেদন ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না!
সেই বিকেলের পর থেকে আমি বোধহয় জীবনে একটা দিনও শতভাগ খারাপ ভাবে পার করি নি। কিন্তু অর্থহীন জীবনের ততোধিক অর্থহীন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে হয়ত অনেক সময় সন্ধ্যার আকাশের রঙ পালটানো দেখতে ভুলে গিয়েছি, হয়ত শরতের অনেক কাশফুলের কণা ছুঁতে এসে অপ্রস্তুত হয়ে ফিরে গেছে। এভাবেও জীবনটা খারাপ কাটছিল তা নয়, কিন্তু হেমন্তের আকাশে কালপুরুষকে একটু অপেক্ষা করতে বলে আমি যে সেকথা বেলামুল ভুলে গিয়েছিলাম তার দায় কে নেবে? ব্যস্ত ছিলাম, তবে দিনগুলো কাটছিল মন্দ নয়, কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে দিল এই দুহাজার বিশ। কাঁধ ধরে শক্ত ঝাঁকুনি দিয়ে বলল- ওঠ ওঠ, বেলা যে বয়ে যায়! জীবন হাত খুলে যা মণিমাণিক্য ছড়িয়ে দিল, তা কুড়িয়ে নেয়া হল কই?
বিষাদের এই দুহাজার বিশ কেড়ে নিয়েছে অনেকের অনেক প্রিয়জনকে, অনেকের বেঁচে থাকাকে করেছে মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। সেদিক দিয়ে দেখলে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলতেই হয়- কোভিড নামক বিচ্ছিরি অসুখটা আমার জীবন থেকে দুমাস সময় চেয়ে নিয়েছে বড়জোর। কিন্তু সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকার যেই অভিনয়, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে একটা বিষম টিটকারিও দিয়ে গেছে বলতেই হয়!
সাথে এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছে- কতদিন শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় মেঘেদের সভা দেখা হয়নি!